2.21.2008

সংস্কৃতি ও রাজনীতি : লক্ষ্য ও উপায়

যতীন সরকার

হাঙ্গেরির প্রখ্যাত দার্শনিক ও চিন্তাবিদ লুকাচ বলেছিলেন- ‘সংস্কৃতিই হচ্ছে মূল লক্ষ্য, রাজনীতি সেই লক্ষ্য সাধনের একটি উপায় মাত্র।’ লুকাচের এই ছোট্ট কথাটি যে অনেক বড় তাৎপর্যের দ্যোতক, সেদিকটিতে আমরা মোটেই মনোযোগী হইনি। যদি হতাম তবে সংস্কৃতি ও রাজনীতির পারস্পরিক সম্পর্কটি যেমন আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠত, তেমনি আমাদের রাজনীতিতে সঞ্চিত অনেক জঞ্জালও আমরা পরিস্কার করে নিতে পারতাম। অথচ তার বদলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক পর্বে রাজনীতিকেই আমরা লক্ষ্য বলে নির্ধারিত করে নিয়েছি, আর সংস্কৃতিকে সেই লক্ষ্য থেকে অনেক দূরবর্তী স্থানে স্থাপন করে তাকে একান্তই চিত্তবিনোদনের উপায় বলে মনে করছি। সংস্কৃতি ও রাজনীতি সম্পর্কে এ রকম ভ্রান্ত বিচারই অনেক অনেক ভ্রান্তির গোলক ধাঁধায় প্রতিনিয়ত আমাদের ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে। আমাদের অর্বাচীন ও মননবিহীন রাজনীতিই এ ধরণের ভ্রান্তির সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। অনেক রাজনীতিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীই এ থেকে অনেক সুযোগ নিচ্ছে, ‘বিশুদ্ধ’ চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্র থেকেও ছিনিয়ে এনে সংস্কৃতিকে তারা নিজেদের ক্ষুদ্র ও সংকীর্ণ স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহার করছে।

সংস্কৃতি অবশ্যই তথাকথিত ‘বিশুদ্ধ’ কোনো বিষয় নয়, কিংবা কেবল নয় নিতান্তই চিত্তবিনোদনের কোনো সামগ্রী। মানবজীবনের সকল কিছুকেই ধারণ করে এই সংস্কৃতি। জীবনের সমগ্রতা থেকে পৃথক বা অন্য নিরপেক্ষ বা অনন্য নয় বলেই সংস্কৃতি কিছুতেই ‘বিশুদ্ধ’ হতে পারেনা। চিত্তবিনোদন বা চিত্তরঞ্জন যেহেতু জীবনেরই অংশ, তাই সেটি সংস্কৃতিরও অংশীভূত বটে। আর যেহেতু কেবল হালকা চিত্তবিনোদনে জীবনের সম্পূর্ণতা আসেনা, কঠিন কঠোর মননশীলতা ছাড়া জীবন হতে পারেনা অর্থময়, তাই মননশীলতাও মানব-সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। অর্থাৎ বিনোদন ও মনন, কোমল ও কঠোর, আত্মিক ও বৈষয়িক- সব কিছুর সমবায়ে গঠিত যে মানবিক কৃতি, তা-ই সংস্কৃতি। তাই, সংস্কৃতি অবিমিশ্র বা বিশুদ্ধ হয় কীসে?

তবে অন্য এক অর্থে সংস্কৃতির বিশুদ্ধতাও আছে বৈকি। সেটি এই অর্থে যে সংস্কৃতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্লানিহীন মানব-বিকাশ, প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের ও সামাজিক মানুষের বাধামুক্ত বিকাশ। তাই এই বিকাশের অনুকূল যা তাই বিশুদ্ধ সংস্কৃতি। এর প্রতিকূল যা তাই অশুদ্ধ সংস্কৃতিÑ একালের ভাষায় ‘অপসংস্কৃতি’, সংস্কৃতি নামের যোগ্যই নয় যা। তবু এই অপসংস্কৃতিই আত্মবিজ্ঞাপনের ঢক্কা নিনাদে প্রকৃত বা বিশুদ্ধ সংস্কৃতিকে প্রায়ই আড়াল করে ফেলে। অপসংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করেই শুদ্ধ সংস্কৃতিকে তথা মানবিকতাকে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে হয়। অর্থাৎ সংস্কৃতির জন্য সংগ্রামই মানুষের সংগ্রাম-মানবিক সংগ্রাম। দানবের সাথে মানুষের সংগ্রামই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

মানুষের সংগ্রামের এই ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত, এবং তার প্রকৃতি বহুমাত্রিক। সেই বহুমাত্রিকতারই একটি মাত্রার নাম রাজনীতি। এই রাজনীতিও অবশ্যই একপাক্ষিক নয়, বহুপাক্ষিক। অন্তত দ্বিপাক্ষিক তো বটেই। এর একটি পক্ষের লক্ষ্য বিশুদ্ধ সংস্কৃতি তথা মানবিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা দান, অন্যপক্ষটি মানব-বিরোধী অপসংস্কৃতির সেবায় নিয়োজিত। আমাদের দেশের রাজনীতিরও নিশ্চয়ই এ রকম দুটো পক্ষ ছিল এবং আছে। তাই ধরে নেয়া যায় যে, এই দুটোরই একটি পক্ষ মানবিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাকে লক্ষ্যবিন্দুতে রেখে সংগ্রাম করেছে এবং অন্যপক্ষটি এর বিপরীত অর্থাৎ মানব-বিরোধী সংস্কৃতি তথা অপসংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাকেই তার লক্ষ্যভূত করে রেখেছে। শুধু ‘ধরে নেয়া’ কেনো, পাকিস্তান পর্বে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের ক্ষেত্রটি সন্দেহাতীত রূপেই ছিল মানবিক সংস্কৃতি ও মানবিকতা-বিরোধী সংস্কৃতির দ্বৈরথ।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, বাংলা বর্ণমালার সংস্কার ও সংহারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম, রবীন্দ্র-বর্জন ও নজরুলের মুসলমানীকরণ প্রতিরোধের সংগ্রাম- এ রকম সকল সংগ্রামই ছিল মানবিকতা-বিরোধী অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে শুদ্ধ মানবিক সংস্কৃতির সংগ্রাম। তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব অংশের অধিবাসী বাঙালির কাছে ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

পাকিস্তান নামক অপরাষ্ট্রটিই সকল প্রকার অমানবিক অপসংস্কৃতির ধারক, এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং এ ভূখণ্ড থেকে পাকিস্তানকে উচ্ছেদ করেই ঘটতে পারে মানবিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা। এভাবেই জেগে উঠল সুস্থ সবল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। হাজার বছরের বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সম্পদ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এ ভূখণ্ডের মানুষ সচেতন হয়ে উঠল। ‘জাতীয়তাবাদ’ অবশ্যই একটি রাজনৈতিক প্রত্যয়, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জাতীয়তাবাদ সার্থকতা পায়। কিন্তু জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ও বিকাশ একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা। জাতীয়তাবাদ যখন মানবিকতাকে আশ্রয় করে এবং অমানবিক অপসংস্কৃতিকে প্রতিরুদ্ধ করে, তখনই তাকে বলি আমরা সুস্থ জাতীয়তাবাদ। এর বিপরীতটি হলেই জাতীয়তাবাদ হয়ে যায় উগ্র ও অসুস্থ। পাকিস্তান ও পাকিস্তানি ভাবধারার বিরুদ্ধে সংগ্রামরত বাঙালি জাতীয়তাবাদ ছিল সুস্থ মানবিক সংস্কৃতির বাহক। তাই যে রাজনীতি সেই বাঙালি সংস্কৃতির বাধামুক্ত বিকাশকে সেদিন লক্ষ্যবিন্দু বলে নির্ধারণ করে নেয়, সংস্কৃতির উত্তুঙ্গ মহিমার প্রতি যে রাজনীতি নম্র ও নতশির থাকে, সে রাজনীতিও অসুস্থ থাকতে পারেনা। স্বাধিকার-আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির সকল রাজনৈতিক কর্মপ্রয়াস ছিল সেই বিশুদ্ধ সংস্কৃতি-বলয়ের অন্তর্ভুক্ত, রাজনৈতিক সংগ্রাম ছিল সংস্কৃতির সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা দানের উপায় রূপেই দেখা দিয়েছিল রাজনীতি।

কিন্তু দুঃখ এই, রাজনীতি ও রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অনেকেই অকুন্ঠ চিত্তে সংস্কৃতির প্রাধান্যকে মেনে নিতে পারেননা। সংস্কৃতিই যে রাজনীতির মূল লক্ষ্য, অধিকাংশ রাজনীতিকের চৈতন্যে সে ধারণা অনুপস্থিত। সংস্কৃতির বিরাটত্ব ও সর্বব্যাপিত্ত উপলব্ধি করার মতো প্রজ্ঞার অধিকারী নন বলেই তারা সংস্কৃতিকে রাজনীতির সেবাদাস বানাতে চান, কখনও কখনও বা ফরমাস দিয়ে সংস্কৃতি নির্মাণ করতে চান।

স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরই এ অবস্থাটি অত্যন্ত বিশ্রী রকমে প্রকট হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি যে দীর্ঘকালের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বিনির্মিত হয়েছিল, মুক্তিসংগ্রামটা যে নিজেই ছিল একটা সাংস্কৃতিক সংগ্রাম কিংবা সাংস্কৃতিক সংগ্রামের পরিণাম মাত্র, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিকরা সে কথাটা অস্বীকার করতে বা বেমালুম ভুলে যেতে চাইলেন। তাঁদের কথায় ও আচরণে সংস্কৃতিহীনতা ও সংস্কৃতি-বিরোধীতার প্রকাশ উগ্র হয়ে দেখা দেয়। আনকালচার্ড রাজনীতি বাংলা ও বাঙালির কালচারকে রাহুগ্রস্ত করে ফেলে। এরই পরিণামে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত সুফল বাঙালির হাতছাড়া হয়ে গেল, এমনকি জাতির বাঙালি নামটা পর্যন্ত মুছে দিয়ে ‘বাংলাদেশী’ নামে এক পিতৃপরিচয়হীন নামফলক তার গায়ে সেঁটে দেয়া হলো। পরাজিত পাকিস্তান তার বাংলাদেশি অনুচরদের দিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিল, ওই বাংলাদেশীদের দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি অপসংস্কৃতিকে ফিরিয়ে আনল, দেশটিকে ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার অবাধ বিচরণক্ষেত্র করে তুলল। অর্থাৎ অপসংস্কৃতি জয় করে নিল বিশুদ্ধ সংস্কৃতিকে। মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি মানবিক সংস্কৃতির দিকে লক্ষ্য রেখে যতদূর অগ্রসর হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধোত্তর রাজনীতি বাংলাদেশকে ততদূরই পিছিয়ে নিয়ে গেল।

এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি। অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের কথা এবং তার সমাপ্তিকরণের কথা রাজনীতিকরাও বলেন। যে রাজনীতিকরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তারাতো বলেনই। যারা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগী হয়ে মুক্তিকামী বাঙালিকে নিপীড়ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার পেয়ে তারাও চোরের মায়ের মতো বড় গলায় মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। তারাই বরং বেশি বলে। বাংলা ও বাঙালির ওই চিরশত্রুদের মুখেই আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথার খৈ ফোটে। তবে মুখে যা-ই বলুক- এরাতো বাংলাদেশকে পাকিস্তানের নতুন সংস্করণ হিসেবেই দেখতে চায়, এরা যে আবহমান বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি তথা সুস্থ মানবিক সংস্কৃতির দুশমন, এ কথাতো যে কোনো সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষই বোঝে। এদের কাছে সুন্দর বা মহৎ কিছু আশা করাটাই বোকামি। অপসংস্কৃতির কীটগুলো সংশোধিত হয়ে সুস্থ সংস্কৃতির লক্ষ্যে সুস্থ রাজনীতি করবে এমন আশা করে বোকামির পরিচয় দেবো কেনো আমরা?

কিন্তু সত্যি সত্যিই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যে সব রাজনীতিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী। যাদের ঘোষিত লক্ষ্য একটি সেক্যুলার ও সমাজতন্ত্রমুখী বাংলাদেশ, সেই লক্ষ্যাভিসারী বলে কথিত হওয়ার দরুনই যারা স্বাধীন বাংলাদেশেও পাকিস্তানপন্থী ও অপসংস্কৃতির বাহকদের রোষের শিকার, তাঁদের প্রতিতো আমাদের প্রত্যাশা থাকবেই। অথচ অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের প্রত্যাশা পূরণের যোগ্যতা ওই রাজনীতিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর নেই। অর্থাৎ এরাও সংস্কৃতিমনা নন। এরাও রাজনীতিকেই চুড়ান্ত বলে ধরে নেন, রাজনীতিকেই একাধারে উদ্দেশ্য ও উপায় বলে জ্ঞান করেন।

প্রেম আর যুদ্ধের মতো রাজনীতিতেও অন্যায় বলে কিছু নেই- এরকম কৌটিল্য ভাবনাতেই এদেরও আস্থা। তাই যদি হয়, তাহলে আমরা কেনো ও কীভাবে ওই সংস্কৃতিহীন রাজনীতিকদের ওপর আস্থা রাখব? আমরা যারা রাজনীতিক নই, কোনো রকম রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বা ক্ষমতা দখলের স্পৃহা যাদের নেই, সেই আমরা কেন প্রতিনিয়ত রাজনীতিকদের দাবার ঘুঁটি হয়ে থাকবো? আমরা অগণিত সাধারণ মানুষতো চায় মানুষের মতো বেঁচে থাকতে। মানুষের মতো বেঁচে থাকা মানে সংস্কৃতিমান হয়ে বাঁচা। সংস্কৃতিমান হয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রথমেই প্রত্যেক মানুষের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-বাসস্থান-স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা-কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা থাকা প্রয়োজন। কোনো এক গোষ্ঠীর মানুষ বিত্তে-বিদ্যায়-প্রতিপত্তিতে অসাধারণ প্রতাপশালী হয়ে অন্য গোষ্ঠীর মানুষদের শোষণ-পীড়ন-দমন করবে, এমন অবস্থার অবসান প্রয়োজন। সকলে অবাধে আপন মত প্রকাশ করবে, যে কেউ যে কোন ধর্ম-মতের অনুসারী হতে পারবে কিংবা কোনো ধর্মমতে বিশ্বাসী না হওয়ার অধিকারও একজন নাগরিকের থাকবে, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যে কোনো জাতিসত্তার মানুষ আপন ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের সুযোগ পাবে, কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য কোনো মানুষ নিগ্রহ বা বৈষম্যের শিকার হবেনা, জন্মই হবে না কারো আজন্ম পাপ- সমাজের প্রতিটি মানুষের জন্য এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। আমরা চাইব, ওইসব প্রয়োজন মেটানোর জন্য রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো আমাদের সহায় হবে। আমাদের এই চাওয়ার বিরোধী যারা তাদের আমরা অবশ্যই রুখে দাঁড়াব এবং এই রুখে দাঁড়ানোয় যে সব রাজনৈতিক গোষ্ঠী আমাদের পাশে থাকবে তাদেরই আমরা মিত্র বলে গ্রহণ করব। এই মিত্রদের নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের নতুন পর্যায়ে অর্থাৎ অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তিকরণে প্রবৃত্ত হতে পারব।

কিন্তু এ রকম সংস্কৃতি-চেতনায় পরিশীলিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী আমরা কোথায় পাবো? আজকের সব রাজনীতিই তো অসংশোধনীয় রূপে কলুষিত। সংস্কৃতিবোধহীন কলুষিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো সুস্থ সংস্কৃতির লক্ষ্যাভিমুখী হয়ে সেই লক্ষ্য সাধনের উপায় রূপে সুস্থ রাজনীতির চর্চা করবে- এমন প্রত্যাশা অসম্ভবের প্রত্যাশা। সেই অসম্ভবের পিছনে না দৌড়ে আজকে গণমানুষের মধ্যেসুস্থ সংস্কৃতি-চেতনার প্রসার ঘটানোর প্রয়াস গ্রহণ করাই হবে সঠিক ও সঙ্গত পদক্ষেপ। সেই পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই গড়ে তোলা যায় একটি সর্বতোমুখী সংস্কৃতি-আন্দোলন। এ রকম সংস্কৃতি আন্দোলন ছাড়া সমাজের কোনো অংশ থেকেই কলুষ-কালিমা দূর করা এবং কাক্সিক্ষত বৈপ্লবিক রূপান্তর ঘটানোর দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে না। সেই সংস্কৃতি-আন্দোলন থেকেই সুস্থ রাজনৈতিক ধারাটি বেরিয়ে আসবে। সেই রাজনীতির লক্ষ্যটি সঠিক হবে বলেই সে লক্ষ্য সাধনের উপায়টিও সঠিক না হয়ে পারবে না। লক্ষ্য ও উপায়ের সামঞ্জস্য ঘটিয়েই আমরা নতুন মুক্তিযুদ্ধে নামতে পারি। সেই মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করেই আমরা পারবো বিশুদ্ধ মানবিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা করতে ও সব রকম অমানবিকতার হাত থেকে মুক্ত হতে।

No comments:

উপরে ফিরে যান