2.21.2008

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ

কামাল হোসেন

সম্ভবত বাঙালির মতো অদ্ভুত জাতি পৃথিবীতে আর নেই। এ জাতির ভিক্ষুক সম্প্রদায় ভিক্ষে করে গান গাইতে গাইতে। এ জাতির ভিক্ষুক সম্প্রদায়ের একটা অংশ (ফকির ও সন্ন্যাসী) পরাক্রমশালী ঔপনিবেশিক ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ বিদ্রোহের মাধ্যমে অনেক যুদ্ধ করেছে- অনেক যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীকে পরাভূতও করেছে। বঙ্কিমচন্দ্র রচিত ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসের নায়ক নায়িকার কথা বাঙালি শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কারনা জানা? যে বিষয়টা সাধারণ পাঠকের জানা নেই তাহলে ঐ উপন্যাসের নায়ক নায়িকা ছিলেন ঐতিহাসিক চরিত্রের সাহিত্যিকরূপে মাত্র। তাঁরা আর কেউ নন; ভবানী পাঠক হচ্ছে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নায়ক। তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের একজন ব্রাহ্মণ এবং পলাশীযুদ্ধের একজন পরজিত সৈনিক। তিনি ইংরেজ কোম্পানীর কর সংগ্রাহকদের নিকট থেকে টাকা লুট করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করতে থাকেন এবং পর্যায়ক্রমে সন্ন্যাসীদের নেতায় পরিণত হন। আর দেবী চৌধুরানী হচ্ছেন পীরগাছা মন্থনার জমিদার। তিনি ভবানী পাঠকের ইংরেজবিরোধী কাজকর্মে আকৃষ্ট হন এবং তাঁর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করেন। অতপর উভয়ের প্রচেষ্টায় ফকির ও সন্ন্যাসীদের সশস্ত্র অভ্যূত্থান ঘটে ইংরেজ কোম্পানীর বিরুদ্ধে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন নুরুল উদ্দীনের নেতৃত্বে কৃষক বিদ্রোহ (সৈয়দ শামসুল হকের নুরুলদীনের সারাজীবনের আহ্বান ‘জাগো বাহে কোনঠে সবাই’ স্মরণযোগ্য)। এই তিনজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে যে বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তার ফলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর শাসকগণ বেশ বেকায়দায় পড়েন। প্রকৃতপক্ষে বক্সার যুদ্ধে মীর কাশিম, অযোগ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানীর নিকট পরাজিত হবার পরে যখন তাদেরকে বাধাদানের কোনো রাজনৈতিক শক্তি অবশিষ্ট ছিলনা তখন বৃহত্তর রংপুর, রাজশাহী, বগুড়া ও বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে ফকির ও সন্ন্যাসী সম্প্রদায় ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইংরেজ বিরোধী (উপমহাদেশে) সামাজিক শক্তির সূচনা হল। শুধু তাই নয় ‘সত্যাগ্রহ আন্দোলন’, ‘তেভাগা আন্দোলন’, ‘তুলাগুন্ডি আন্দোলন’ সহ অনেক সংগ্রামে উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুর ইতিহাসে বীরত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।

ফকির সন্ন্যাসীদের পরিচয়:
আমাদের বাঙালি সমাজে সাধারণত দুধরণের ভিক্ষুক দেখা যায়। এক শ্রেণীর ভিক্ষুক নিছক জীবিকার জন্যে দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষে করে, আধুনিককালে এদের সমিতির কথা জানা গেলেও একা বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করে। অর্থাৎ অন্যান্য ভিক্ষুকদের সঙ্গে একত্রে বাস করেনা। অন্যদিকে আর একটা ভিক্ষুক সম্প্রদায় আছে যারা সংসার জীবন ত্যাগ করে মুষ্ঠিভিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত খাদ্যশস্যাদির দ্বারা নিজেদের জীবীকা নির্বাহ করে এবং যৌথ বা সংঘবদ্ধ জীবনাচারে অভ্যস্ত। তারা প্রায় উলঙ্গ বা অর্ধ উলঙ্গ থাকে। সাধারণতঃ তাদের সঙ্গে থাকে চিমটা, ত্রিশূল কিংবা বেশ শক্ত লাঠি অথবা লৌহদন্ড। রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে এগুলি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কখনো বন্যজন্তু, পোকামাকড় দস্যুর দ্বারা আক্রান্ত হলে এসকল দেশী অস্ত্র আত্মরক্ষার কাজে লাগায়। তারা সাধারণত দিনের বেলায় গৃহস্থের দ্বারস্থ হয়ে মুষ্টিভিক্ষা সংগ্রহ করে এবং দিবসান্তে একটা নির্দিষ্ট স্থানে আখড়ায় সকলে প্রত্যাবর্তন করে। অতপর যৌথ ব্যবস্থাপনায় আহারাদি সম্পন্ন করে এবং ঈশ্বরের গুণকীর্তণ করে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের জীবনযাপন আধ্যাত্মিক কোনো মতবাদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলা অঞ্চলে ভিক্ষুক সম্প্রদায় ধর্মীয় বিভাজন দ্বারা অনেক ক্ষেত্রে বিভক্ত। সমাজের অন্তরালে বিরাজমান প্রায় অবহেলিত এই ভিক্ষু সম্প্রদায় কেন ইংরেজ কোম্পানীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এটা তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।

ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহের কারণ:
এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ড: সিরাজুল ইসলাম ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ নামক সংকলিত গ্রন্থে বলেন: “দেশ, জাতি, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতির বিষয়ে জনগণ তখন সজাগ ছিলনা ও ধর্মভিত্তিক আচার অনুষ্ঠানই ছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তা ধারার ভিত্তি। এই সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করিলে যে কোন দেশী বা বিদেশী কেন্দ্রীয় সরকারকে মানিয়া নিতে তাহাদের আপত্তি ছিলনা। সরকারী নীতির সমালোচনা ও প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিত তাহারা তখনই যখন সরকার স্থানীয় শাসনে, ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করিত।” সম্রাট আকবরের আমল হতে সমাজের ভিক্ষুক সম্প্রদায়টি রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেতে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ‘নাগা’ ও ‘গিরি’ সন্ন্যাসীরা বিভিন্ন সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। অযোধ্যার নবাবের সৈন্য বাহিনীতে ‘গোসাই’ বাহিনী গঠিত হয় মূলত: ঐ সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে। কোম্পানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মীর কাশিম ফকির সন্ন্যাসীদের সাহায্য নিয়েছিলেন। কোম্পানী বিজয়ী হয়ে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে দিঊয়ানী লাভের মাধ্যমে। এই সময়ই কোম্পানী ফকির ও সন্ন্যাসীদেরকে সন্দেহের চোখে দেখে এবং তাদেরকে ‘দস্যু’ বলে আখ্যায়িত করে। তাই তাদের গতিবিধির ওপর সরকার নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। শুধু তাই নয় ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ হলো এবং তাদের ওপর তীর্থকর আরোপ করা হলো যা ইতোপূর্বে কোন সরকার বা কর্তৃপক্ষ করেনি। তাই বাংলা অঞ্চলে ১৭৬০-১৮০০ খৃস্টাব্দের মধ্যে অসংখ্য ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দেয়। ফকির সম্প্রদায়ের ওপর উপরোক্ত বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেয়ার ফলে বিদ্রোহ করেছিল। তাদের বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত হয় কোম্পানী রাজস্ব আদায়কারী কর্মচারীদের নির্যাতন প্রসূত সাধারণ মানুষের অসন্তোষ। সাধারণ মানুষেরাও ফকির সন্ন্যাসীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিদ্রোহ করে। কোম্পানীর রাজস্ব আদায়কে কেন্দ্র করে কৃষকরা যে ভীতিকর অবস্থায় পড়ে তা হতে মুক্তি পাবার জন্যে তারা চাষাবাদ বন্ধ করে দিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় গ্রহণ এবং ফকির সন্ন্যাসীদের সঙ্গে যোগদান করে। একদিকে চাষাবাদ বাধাগ্রস্থ অন্যদিকে ১৭৬৯-১৭৭০ খৃস্টাব্দে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় যা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে (বাংলা ১১৭৬) নামে পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে ফকির ও সন্ন্যাসীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সাধারণ কৃষকেরাও ইংরেজ কোম্পানী ও তাদের সহায়ক শক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অংশ নেয়।

বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহ:
এতদঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহে তিনজন নেতার পরিচয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা হলেন ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানী ও নুরুলউদ্দীন। ভবানী পাঠক ১৭৬০ সাল থেকে কর আদায়কারী, উৎপীড়ক শ্রেণীটির নিকট থেকে টাকা পয়সা লুট করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টন করতেন এবং গভীর জঙ্গলে তাঁর ডেরা গড়ে তোলেন। ভবানী পাঠক পরবর্তীকালে বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলাধীন রাজারহাট থানায় চাকিরপাশা গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তাঁর নামানুসারে ঐ গ্রামের নাম পাঠকপাড়া হয়েছে বলে জানা যায়। তাঁর উত্তরসূরীরা আজও পাঠক পাড়াতে বসবাস করছেন। ভবানী পাঠক বৃহত্তর রংপুর জেলার বিভিন্ন গভীর অরণ্যে দেবী চৌধুরানীর সহযোগীতায় সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। পীরগাছা মন্থনার জমিদার দেবী চৌধুরানী ভবানী পাঠকের আদর্শে দীক্ষা গ্রহণ করে এই আন্দোলনকে শক্তিশালী রূপ দান করেন। এভাবে তিস্তা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গভীর জঙ্গল, ধরলা ও পয়রাডাঙ্গা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান, মীরবাগ ভূতছাড়ার গভীর অরণ্যে সন্নাসীদের আস্তানা তথা দুর্গ গড়ে ওঠে। এ ছাড়াও উলিপুর, মরাতিস্তা, পীরগাছা ও চৌমুহনীতেও সন্ন্যাসীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। দেবী চৌধুরানী ও ভবানীপাঠক ফকির সন্ন্যাসীদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে গোপন বৈঠকে মিলিত হতেন। এ সময় রাজস্ব আদায়কারী দেবী সিংহ ও তার কর্মচারী হরেরামের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষকে রক্ষার্থে এগিয়ে এলো সমাজের অবহেলিত প্রায় অংশটি ফকির সন্ন্যাসীরা। কোম্পানী ও মীর জাফরের কাহিনীর সঙ্গে ১৭৬০ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি তারিখে মাসিমপুরে ভবানীপাঠক ও দেবী চৌধুরানীর ফকির সন্ন্যাসী বাহিনী প্রচন্ড যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কোম্পানীর বাহিনী সাঁড়াশী অভিযান চালায়। কিন্তু বিদ্রোহী ফকির সন্ন্যাসীরা প্রচন্ড সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে কোম্পানী ও মীরজাফরের বাহিনীকে পরাজিত করে। ইংরেজ ক্যাপ্টেন ক্রকেনসহ বেশ কিছু শত্র“সৈন্য নিহত হয় মাসিমপুরের এই যুদ্ধে। অন্যদিকে ফকির সন্ন্যাসীদের পক্ষে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে দলীব খাঁ ও আসালত খাঁ সহ অনেকেই নিহত হন। এরপর পীরগাছা মন্থনার একজন ছোট জমিদার হওয়া সত্ত্বেও দেবী চৌধুরানী তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারণে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ‘জয় দূর্গাদেবী’ বা ‘চন্ডী মা’ নামে জনসাধারণের নিকট শক্তির উৎস ও ভরসাস্থলে পরিণত হন। তার নামানুসারে দেবী চৌধুরানী নামক একটা এলাকা ও রেলস্টেশন আজও তাঁর পূণ্যস্মৃতি বহন করে চলছে। কিন্তু চন্ডী মা দেবী চৌধুরানী শেষাবধি ১৭৮৩ খৃস্টাব্দে স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংসের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হন বলে জানা যায়। লড়াইটি হয় রংপুর জেলার পীরগাছা মৌজায় ১৭৮৩ সালের বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে। পরবর্তীকালে বঙ্কিমচন্দ্র রংপুর জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকালে এই ঘটনা জানতে পারেন এবং দেবী চৌধুরানী নামে উপন্যাস লেখেন।

পরবর্তীকালে আরো অনেক নারী নেত্রী ইংরেজ বিরোধীতায় অবতীর্ণ হন। পাঙ্গার রানী লক্ষ্মীপ্রিয়াও এ ধরণের একজন যোদ্ধা বলে জানা যায়। পাঙ্গার রাজা/ রাণীদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে কুড়িগ্রাম শহরে বি.ডি.আর. ব্যাটালিয়ন গেটের সামনে ‘কালু খাঁ’ ও ‘ফতে খাঁ’ নামক দুটো কামান শোভা পাচ্ছে। অবলা ও অবহেলিত নারী সমাজের একজন হওয়া সত্ত্বেও দেবী চৌধুরানী বীরত্ব ও সাহসিকতার যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা বর্তমানকালেও নারী সমাজ তাদের সমস্যা সমাধানে অনুপ্রেরণা পেতে পারে।

অন্যদিকে ভবানী পাঠক তার সন্ন্যাসী দল নিয়ে কর্মকান্ড অব্যাহত রাখেন। এ জন্য রংপুর জেলা কালেক্টরেট গুডলাক সাহেব লে. ব্রেনানকে একদল সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। অকস্মাৎ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে আক্রমণ করে ভবানী পাঠকের বাহিনীকে ব্রেনান পরাভুত করেন। তাঁর রিপোর্ট অনুযায়ী ঘটনাস্থলেই ভবানী পাঠকের মৃত্যু হয়। অন্য আর একটি সূত্র হতে জানা যায় ধৃত ভবানীপাঠকের বিচার হয় ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে এবং তাকে দ্বীপান্তরে প্রেরণ করা হয়। তবে অন্য একটি সূত্রের মতে তিনি পরাভুত হননি, তাঁর শেষ জীবন পর্যন্ত সন্ন্যাসীদের নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি কুড়িগ্রাম, উলিপুর, কাঁঠালবাড়ী, নাগেশ্বরী, মাদারগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন। তার উত্তর মুরুষেরা রাজারহাটের পাঠকপাড়ায় অদ্যাবধি বসবাস করছেন।

এতদঞ্চলের অপর একজন কৃষক বিদ্রোহের নেতা নুরুলউদ্দীন। তবে ভোগবিলাসী ছিলেন বলে জানা যায় এবং সে সুযোগ গ্রহণ করেই ইংরেজ কোম্পানী গুপ্তচর মারফত তথ্য সংগ্রহ করে তাঁকে অকস্মাৎ আক্রমণের মাধ্যমে হত্যা করে। কাকিনার জমিদার অলকা কোম্পানীর সঙ্গে পরামর্শ করে পবিত্রা নামক একজন নারীকে ছদ্মবেশে দেবী চৌধুরানীর দরবারে প্রেরণ করে। দেবী চৌধুরানীর নিকট থেকে নুরুলউদ্দীন সম্পর্কিত তথ্য পবিত্রার মাধ্যমে সংগ্রহপূর্বক"অলকা কোম্পানীর নিকট প্রেরণ করেন। এরই ভিত্তিতে কোম্পানী ম্যাগডোনাল্ড নামক একজন সেনাপতিকে নুরুলউদ্দীনের বিরুদ্ধে প্রেরণ করে। মোগলহাট নামক স্থানে ম্যাগডোনাল্ড তাকে আক্রমণ করলে নুরুলউদ্দীন নিহত হয়। এটা উপকথা, এতে ইতিহাস কতটুকু আছে বিচার করা কঠিন কাজ। কথিত আছে, সফল গুপ্তচর বৃত্তির পুরস্কার হিসেবে অলকা ও পবিত্রা কোম্পানীর নিকট থেকে কাকিনা ও বামনডাঙ্গার জমিদারী লাভ করে এবং প্রজাপীড়ন অব্যাহত রাখে।

ফকির সন্ন্যাসীদের গতিবিধির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও অন্যান্য কারণে বর্ধমানে যে ফকির সন্নাসী বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় তা ক্রমাগত রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, গাইবান্ধা ও বাকেরগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহ। তাই অন্যান্য অঞ্চলে সংঘটিত অনুরূপ বিদ্রোহ সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হলোনা। ফকির সন্ন্যাসী বিদ্রোহের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে রাজশক্তি ও উৎপীড়কদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যে উত্থান ঘটে তা নানা দিক থেকেই তাৎপর্যবাহী। পরবর্তীকালের অনেক সংগ্রামকে এটি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এতদঞ্চলের মানুষ আজও যে সৎসাহসের পরিচয় দেন তার ভিত্তি সম্ভবত অতীতের সেইসব বিদ্রোহী চেতনা।

1 comment:

Rabilmh said...

সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য একটি লেখার জন্য বি শে ষ কৃতজ্ঞতা।

উপরে ফিরে যান