এম এম আকাশ
বাংলাদেশ এখন ক্রস রোডে দাঁড়িয়ে। এখানে রয়েছে পরস্পর বিরোধী চারটি রোড বা রাস্তা। প্রথম দুটির একটি হচ্ছে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখার রাস্তা। অপরটি হচ্ছে কোন না কোন ধরনের অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্থান এবং সেটি কতদিন থাকবে সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ক্রস রোডের অন্য দুটি রাস্তার একটি হচ্ছে, বাংলাদেশে মিনি পাকিস্তান ধাঁচের ভাবাদর্শের শাসন কায়েম। দ্বিতীয়টি হচ্ছে গণতান্ত্রিক শাসন বহাল এবং ক্ষীণ ধারা ও আপসকামী হলেও মুক্তিযুদ্ধের ধারার শাসন অব্যাহত থাকা। এই ক্রস রোডগুলিকে একটি সহজ দুই বাই দুই (২দ্ধ২) ছকের মাধ্যমে নীচে তুলে ধরা হল।
গণতন্ত্র গণতন্ত্র না
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক খ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা না গ ঘ
এই ছক অনুসারে বর্তমান ক্রস রোডের চার রকম ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্ভব। ‘ক’ পরিণতির অর্থ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র উভয়ই অব্যাহত থাকবে। ‘খ’ পরিণতির অর্থ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অব্যাহত থাকবে কিন্তু গণতন্ত্র থাকবে না। পক্ষান্তরে ‘গ’ পরিণতির অর্থ গণতন্ত্র অব্যাহত থাকবে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না। সর্বশেষে ‘ঘ’ পরিণতির অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র উভয়ই ব্যাহত হবে।
জনগণের মনে তাই প্রশ্ন- সবচেয়ে কাম্য ক্রস রোডটি কী? আমার বিচারে গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত রেখে যত ক্ষীণই হোক মুক্তিযুদ্ধের ধারাকে অব্যাহত রাখা গেলেই তা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সহায়ক হবে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশের মানুষের সাধারণভাবে ধারণা হয়েছে, এই দুইয়ের যুগপৎ বিজয় অসম্ভব। অনেকেই একান্ত আলোচনায় বলছেন, যদি মোটামুটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে পাকিস্তানপন্থিরাই ক্ষমতায় আসবেন। এখানে পাকিস্তানপন্থী বলতে তারা বোঝাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামি-বিএনপি সমন্বয়ে গঠিত ১৮ দলীয় জোটের ক্ষমতা গ্রহণকে। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম। একথা ঠিক যে সম্প্রতি যে কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলো মোটামুটি গণতান্ত্রিকভাবে হয়েছে বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে। যদিও প্রতিটি নির্বাচনেই কিছু মাত্রায় কারচুপি হয়েছে বলে ১৮ দলীয় জোটের নেতারা দাবি করছেন। তবে সহজেই আমরা ধারণা করতে পারি যে তারা এটা করছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি চাঙ্গা রাখার জন্য। ১৮ দলীয় জোটের নেতারা বিশ্বাস করেন যে সঠিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণেই তাদের এ বিপুল জয় এসেছে। অর্থাৎ বিগত ৫ বছরে মহাজোটের শাসনামলে নানা রকম বৃহৎ দুর্নীতির (শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রত্যাহার, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ডেসটিনি গ্রুপের লাখ লাখ মানুষের অর্থ আত্মসাৎ প্রভৃতি) কারণে মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি তলানিতে এসে ঠেকেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কোন্দল, দলের ভেতরে সুবিধাবঞ্চিতদের ঈর্ষা, তৃণমূলে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে নানা রকম নয়-ছয়, টেন্ডারবাজি এবং ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগের’ মাস্তানদের দৌড়াত্ম। এগুলো সবই মানুষের মন বিষিয়ে দিয়েছে। তবে এজন্য নয় যে তারা ভেবেছিল, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কোন দুর্নীতিই করবে না বা আওয়ামী লীগ এবার ধোয়া তুলসী পাতার মতো সহজসরল জীবন যাপন করবে। বরং তারা ভেবেছিল যে বাংলাদেশে স্বাভাবিক যে দুর্নীতির মাত্রা, সেটা এবারও থাকবে তবে এবার তা মাত্রাতিরিক্ত হবে না। কারণ শেখ হাসিনা তার মন্ত্রীসভা গঠন করার সময় সে ধরনেরই একটা সংকেত দিয়েছিলেন। আমার ধারণা, এবার শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রীসভা সদস্যদের মাধ্যমে যত না দুর্নীতি হয়েছে তার চেয়ে লুটেরা ব্যবসায়ী এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির প্রকোপ ছিল অনেক বেশি। কয়েকজন মন্ত্রীর কথা বলতে পারি, যাদের সম্পর্কে এখন পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগ কোন মহল থেকেই ওঠেনি। এখানে নাম উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। একথাও স্বীকার্য যে, বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে যে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সে ধরনের একটি অভিযোগ শেখ হাসিনার পরিবারকে ঘিরে প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত বিএনপি পুরোপুরি সফল হয়নি। কিন্তু যাই বলি না কেন, মহাজোট সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল এবার অনেক বেশি।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার যারা লিখেছিলেন, তারা কল্যাণ-ধনতন্ত্র কায়েম করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই ধনতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে ব্যক্তি খাতের বৃহৎ ধনীদের কাছ থেকে আয়ের ৪০-৫০ শতাংশ আয়কর হিসেবে আদায় করা এবং তা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিশূন্যভাবে দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলো (যেমন- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা) পূরণে ব্যয় করা। লেখকরা ইশতেহারের শিরোনাম দেন ‘দিন বদলের সনদ- ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের হৃদকল্প’। যেহেতু দিন বদল হল না এবং এনালগ বাংলাদেশ রয়ে গেল, সেজন্য মানুষের মনে রয়েছে তীব্র আশাভঙ্গের বেদনা।
সবশেষে, সামগ্রিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করবে এবং ধর্মনিরপেক্ষ-সেক্যুলার বাংলাদেশ কায়েম করবে, সেই দলই যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করল অনেক দ্বিধা-দুর্বলতাসহ শাসন মেয়াদের অন্তিমলগ্নে এসে। সংবিধান যথোপযুক্তভাবে বদলানোর সুযোগটিও হেলায়-ফেলায় হারিয়ে গেল। এ কথাও আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বুঝল না যে, ইসলামি কার্ড খেলে এই দলটি কখনই বিএনপির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জিততে পারবে না। আওয়ামী লীগকে পরিষ্কারভাবে মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ ও ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েই অগ্রসর হতে হবে। মুসলিম আওয়ামী লীগ থেকে আওয়ামী লীগ হয়ে পুনরায় মুসলিম আওয়ামী লীগ হওয়ার সুযোগ আওয়ামী লীগের নেই। আওয়ামী লীগকে যদি এগুতে হয় তাহলে সামনের দিকেই এগুতে হবে। যেভাবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগকে ত্রুটিপূর্ণভাবে হলেও বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বানাতে চেয়েছিলেন সেইভাবেই আজও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অতীত ত্রুটিগুলি থেকে মুক্ত হয়ে কৃষক-শ্রমিক অভিমুখেই হাঁটতে হবে আওয়ামী লীগকে। মর্মগতভাবে আওয়ামী লীগ যদি সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকতে চায় এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে দেশ শাসন করতে চায় তাহলে শ্রমিক কৃষক ও দুঃখী মানুষের বাস্তব অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েই তা অর্জন করতে হবে। লুটেরাদের প্রশ্রয় দিয়ে, দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় দিয়ে, দলের ক্যাডারদের টুপাইস কামানোর ব্যবস্থা করে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় না। দুর্ভাগ্য আমাদের, আজ যখন নির্বাচন সামনে এসেছে তখন সবাই বলছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলটি তার কৃতকর্মের কারণে অনিবার্যভাবে পরাজিত হবে। সেজন্যই ক্রসরোডে দাঁড়িয়ে মানুষের ধারণা, সবচেয়ে কাম্য যে কম্বিনেশন গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ক্ষমতায় থাকা, এ দুটি বিষয় একসঙ্গে এবারে ঘটবে না। সত্যিকার গণতান্ত্রিক নির্বাচন হলে বিএনপি-জামাত-হেফাজত জোট এবার ক্ষমতায় আসবে বলেই অধিকাংশ মানুষ মনে করেন।
তাহলে কি বাংলাদেশে মিসরের মুর্সির মতই একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে? কেউ কেউ ভাবেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যেহেতু আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে এবং সামরিক বাহিনী যেহেতু ওই সব আন্তর্জাতিক শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত, সুতরাং বাংলাদেশে মুর্সি ভ্যারিয়ান্ট চালু হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই ভ্যারিয়ান্ট চালুর আগে-তো একটা নির্বাচনের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোটকে বিজয় অর্জন করে ক্ষমতায় আসতে হবে এবং এরপর তাদের অন্যতম পার্টনার মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী শক্তির নবজাগ্রত উত্থান এবং আক্রমণের শিকার হতে হবে বাংলাদেশকে। বিএনপি নেতৃত্বের সবার কাছে এ বিষয়টি সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হবে কি? যদি এ ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিএনপির মধ্যে নতুন মেরুকরণ ঘটে এবং মৌলবাদী জঙ্গি শক্তি শেষ পর্যন্ত বিএনপি কর্তৃক পরিত্যক্ত হয়ে একঘরে হয়ে যায় তাহলে কী ঘটবে সেটা বলা মুশকিল। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক মাত্রায় পৌঁছে গেছে যেখানে নারীদের ঘরে আটকে রাখা বা তালেবানি কায়দায় দেশ চালানো আদৌ আর সম্ভব নয়। সুতরাং মৌলবাদের ওপর ভর করে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও মৌলবাদী ধারার রাজনীতি ও অর্থনীতি সাজাতে গেলে বিএনপি ডুবতে বাধ্য হবে। কিন্তু বিএনপির কাঁধে ভর করে মৌলবাদের সাময়িক উত্থান এবং সাময়িক ধ্বংসলীলা খুবই বাস্তব একটি সম্ভাবনা হিসেবে বিরাজমান। সুতরাং অধিকাংশ বিশ্লেষকই শেষ পর্যন্ত ‘খ’ অথবা ‘গ’ এই দুই পরিণতির কথাই ভাবছেন বলে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ গণতন্ত্র রাখতে গেলে মৌলবাদকে মেনে নিতে হবে অথবা মুক্তিযুদ্ধকে রাখতে হলে গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিতে হবে।
তবে অনেক কিছুই নির্ভর করে যাকে আমরা বলি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ বা ‘লস মিনিমাইজেশন’- সেই ধারায় কতটুকু দৃঢ়তা ও ধৈর্য নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রগতিশীল মিত্ররা এগুতে পারবেন তার ওপর। আত্মসমালোচনায় বিশ্বাসী এ ধারার কোনো কোনো আওয়ামী নেতা আমাকে বলেছেন, তারা প্রায় অর্ধেক দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তিকে পুনরায় মনোনয়ন প্রদান করবেন না বলে স্থির করেছেন এবং তাদের স্থানে নতুন সৎ, যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের এবার মনোনয়ন দেয়া হবে। তারা এটাও বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে পরিচালনার জন্য যাবতীয় দোদুল্যমানতা পরিহার কওে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজকেও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নেয়া হবে। এভাবে দেশব্যাপী একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করা হবে। জানি না, এটা কথার কথা কী না। যদি এটা হয় তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হলেও হতে পারে । এ কথাও কেউ কেউ বলেন, এবার আওয়ামী লীগের শাসনামলে শিল্প ও শহরাঞ্চলে যতখানি অগ্রগতি হয়েছে সেই তুলনায় গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাত্রা ছিল বেশি। সেজন্য তারা বলতে চান যে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী সূচক আর পল্লী এলাকায় ভোটের সূচক এক হবে না। সম্ভবত সেই ধরনেরই কোন জরীপ থেকে প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগের পক্ষে এক ধরনের বিজয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু আমি যেই দুই ধরনের নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা উল্লেখ করলাম সেটি ছাড়া শুধু নিছক তথ্য-জরিপ নিয়ে আত্মসন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকলে পরিস্থিতি সামান্যই সামাল দেওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়।
আরেকটা দিক হচ্ছে, সামরিক বাহিনী ও সুশীল সমাজ ২০০৭ সালের ১/১১-এর আগে যে রকম তৎপর ছিল, সে ধরনের তৎপরতা এবারে দেখাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সাধারণ নির্বাচনে নিশ্চিত জয়ের প্রত্যাশায় থাকা বিএনপি অনেকখানি ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনে আসতে রাজী হয়ে যেতে পারেন। আর এটাও আমরা জানি, আগের মতো এখন মিডিয়া ক্যু ও ভোট চুরি করা সম্ভব নয়। একটি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলেও হতে পারে এবং এতে থাকতে পারে সব পক্ষের অংশগ্রহণ। তখন গণতন্ত্র অব্যাহত থাকবে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে- কে তখন জয়ী হবেন এবং তারপর কী হবে। আবার যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বচনে অংশগ্রহণে সম্মত না হয় এবং আওয়ামীলীগ এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন হয়, তাহলে তখন অবস্থাটি কী দাঁড়াবে? এই বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে-ই আগামী নির্বাচনে জিতুক না কেন সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি ‘খ’ অথবা ‘গ’-র মধ্যেই আটকে থাকবে। ‘খ’ এবং ‘গ’ যেহেতু টহংঃধনষব ঊয়ঁরষরনৎরঁস ঝরঃঁধঃরড়হ, কারও জন্যই সর্বোচ্চ কাম্য পরিস্থিতি নয়, সেহেতু এ অবস্থাও হবে ক্ষণস্থায়ী। তবে কি আমরা শেষ পর্যন্ত ধাবিত হব সবচেয়ে খারাপ ‘ঘ’ পরিণতির দিকে যেখানে গণতন্ত্রও অনুপস্থিত মুক্তিযুদ্ধও অনুপস্থিত?
এই সর্বশেষ ভয়ংকর পরিণতির বিরুদ্ধে আমাদের সকলকেই সর্বশক্তি নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। সব জটিলতা সত্ত্বেও আমাদের সবচেয়ে কাম্য যে ফল- গণতন্ত্র অব্যাহত থাকবে এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এগিয়ে যাবে, যত কঠিনই তা হোক না কেন, সেজন্যই আমাদের লড়তে হবে। যদিও স্বল্প মেয়াদে এই দুয়ের যুগপৎ উপস্থিতি কার্যত অসম্ভব বলেই এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছিলাম বলেই আমরা একাত্তরে প্রবল শক্তিধরকে হারিয়ে বিজয় অর্জন করতে পেরেছিলাম।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
10.02.2013
চৌমাথায় বাংলাদেশ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment